আলকুশি বীজের উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন

এখন আমরা আলোচনা করব আলকুশি বীজে উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। যদি আপনারা আলকুশি বীজের উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

আলকুশি বীজ অনেকেই চিনিনা। এবং এর উপকারিতা সম্পর্কেও জানিনা। যদি আপনারা এই আলকুশি বীজের উপকারিতা একবার শুনেন , তাহলে চমকে উঠবেন। কারণ এর উপকারিতা প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। চলুন তাহলে কোন কোন রোগের জন্য এর উপকারিতা রয়েছে? এবং কিভাবে আল-কুশী বিচ খায়? এ সম্পর্কে আমরা এখন বিস্তারিতভাবে বলব। চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক

    আলকুশি বীজ কি?

    আলকুশির ইরেজী নাম LEGUMINOSAEL.আলকুশি বীজ মূলত গ্রামগঞ্জে সব থেকে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। ঝোপঝাড়, জঙ্গলে, আলকুশি ব্রিজের সন্ধান পাওয়া যায়। এই আল কুশি বীজ এর গাছ থেকে যে ফলটি ধরে সেই ফলটি যদি কচি অবস্থায় ছোয়া যায়, তাহলে সেটি হাত চুলকাবে। এক কথায় এর নাম বলা হয় যে বিছাতু। যারা বিছাতু নামে গাছ চিনেন তারাই বলতে পারবেন আলকুসি বিজ কাকে বলে? আলকুশি বীজ মূলত বিছাতুর ফল থেকে যে বীজ টি সংগ্রহ করা হয়, সেটিকে আলকুশি বীজ বলে। এবং এ বীজটিকে ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে আনা হয়।
    আলকুশি বীজ

    আলকুশি বীজের গুনাগুন

    আলকুশি বিজের বহু গুণাগুণ রয়েছে। তার মধ্যে আমরা এখন কয়েকটি গুনাগুনের কথা বলছি। সেটি হল যাদের আমাশার সমস্যা আছে তারা এই আলকুশি বীজ নিয়মিত খেতে পারেন। যদি আপনারা এ আলকুশির  বীজগুলো নিয়মিত খান, তাহলে আমাশা জীবনের মত দূর হয়ে যাবে। এমনকি যাদের তেল অথবা যে কোন জিনিসের সংস্পর্শে পা হাত ফুলে যায় তাদের জন্য বেশি উপকারী।

    আরো পড়ন=সজনে পাতার উপকারীতা জেনে নিন

    আলকুশি বীজের উপকারিতা

    ১)ক্যান্সার

    আলকুশির  বীজ এটি এমন একটি বীজ, যা খাওয়ার ফলে ক্যান্সারের মত সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে। যাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং ক্যান্সার হয়ে গেছে, তারা এই আলকুশির বিজ খেতে পারেন,। যদি আপনারা নিয়ম মেনে কিছুদিন আলকুশির  বীজ খান তাহলে আপনাদের ক্যান্সার দূর হয়ে যাবে। এবং আলকুশির   বীজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

    ক্যান্সার

    আরো পড়ুনঃগাঁদা ফলের উপকারীতা জেনে নিন

    ২)যৌ*ন রোগ

    যারা যৌ*ন ক্ষমতাই অনেক দুর্বল, তাদের জন্য এই আলকুশির  বিজ অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে কয়েকটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে আলকুশি বীজ খাওয়ার ফলে যৌ*ন ক্ষমতা অধিকারের বৃদ্ধি পায়। আলকুশি বীজে রয়েছে টেস্টোরেন , হরমোনকে বাড়ানোর জন্য একটি বিশেষ উপাদান আছে। যা পুরুষের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।  আলকুশি বীজ খাওয়ার ফলে শুক্রাণু অধিক হারে বৃদ্ধি পায়।

    যৌ*ন রোগ

    ৩) ডায়বেটিস

    ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অল্প উপকারী। যদি কোন ডায়াবেটিস রোগী এই আলকুশির  বীজ নিয়মিত খায়, তাহলে তার ডায়াবেটিস স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসবে। এই আলকুশির বিজ খাওয়ার ফলে শরীরের ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এবং সুগারের মাত্রা দিন দিন কমিয়ে দিতে পারে আলকুশির  বিজ। তাই যদি আপনাদের রক্ত চাপের মতো সমস্যা থেকে, এবং ডায়াবেটিস নিরাময় করতে চান তাহলে অবশ্যই আলকুশির  বিজ আপনার জন্য অনেক উপকারী।

    ডায়বেটিস

    ৪)বদ মেজাজ

    যাদের খিটখিটে মেজাজ রয়েছে, তারা এই আলকুশির  বীজ নিয়মিত খেতে পারেন। কারণে আল-কুশী বিজে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো এসিড রয়েছে। যা মস্তিষ্ককে ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

    আরো পড়ুন=সূর্যমূখি বিচির উপকারীতা জেন নিন

    বদ মেজাজ

    ৫)স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি 

    আলকুশি বীজ স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আল-কুশী বিজে রয়েছে নস্টপিক একটি উপাদান যা। স্মৃতিশক্তিকে বৃদ্ধি করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই যাদের স্মৃতিশক্তি একেবারে দুর্বল তারা এই আলকুশি বীজ খেতে পারেন।

    স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি 

    ৬) হরমন জনিত সমস্যা

    যাদের হরমোন জনিত সমস্যা আছে, তারা এই আলকুশি বীজ খেতে পারেন। আলকুশির  বিজে হয়েছে এন্ড্রেনালিনের মত উপাদান। যা আমাদের শরীরের সঙ্গে মিশে হরমোনের সমস্যাগুলো দূর করতে পারে।

    আরো পড়ুন=তালমাখনা খাওয়ার উপকারীতা জেনে নিন

    হরমন জনিত সমস্যা

    ৭)শুক্রানু বৃদ্ধি

    যদি কোন পুরুষ বীর্যের শুক্রাণু পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চাই, তাহলে তারা এই আলকুশির বিজ খেতে পারে। এই আলকুশির  বীজ খাওয়ার ফলে তাদের শুক্রাণুর মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। কারণ এই আলকুশির  বীজে টেস্টোরেন হরমন রয়েছে, যা পুরুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এবং প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এই আলকুশির  বীজ বিশাল বড় ভূমিকা পালন করে। তাই আপনারা আলকুসির বীজ খেতে পারেন।

    শুক্রানু বৃদ্ধি

    ৮)ঠান্ড জনিত সমস্যা

    যাদের ঠান্ডা জনিত সমস্যা আছে তারা এই আলকুশির বিজ খেতে পারেন। যদি আপনারা কয়েকদিন নিয়মিত আলকুশির বীজ খান তাহলে বুকে জমে থাকা যে কোন ধরনের ঠান্ডা দূর হয়ে যাবে।

    আরো পড়ুন=অপরাজীতা গাছের উপকারীতা জেনে নিন

    ঠান্ড জনিত সমস্যা

    ৯)বিসাক্ত পোকা কামড়

    কোন বিশাক্ত পোকা যদি কামড়ায়, তাহলে সেখানে যদি আলকুশি বীজের গুড়া লাগানো হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রণা থেমে যাবে।

    বিসাক্ত পোকা কামড়

    আরো পড়ুনঃখালিপেটে আনারস খেলে কি হয় জেনে নিন

    ১০)ঋতু স্রাব

    বিভিন্ন মহিলার ক্ষেত্রে দেখা যায় ঋতু স্রাবের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়, তারা যদি এই আলকুশির বিজ খায়, তাহলে তাদের ঋতুস্রাবে যেকোন ধরনের সমস্যা দূর হয়ে চলে যাবে।

    ঋতু স্রাব

    আলকুশী বীজ খাওয়ার নিয়ম

    আলকুশি বীজ খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের নিয়ম রয়েছে।, প্রথম অধ্যায় আলকুশির বিজের পাউডার রয়েছে। এবং বীজ তার সাথে আলকুশির ক্যাপসুল রয়েছে। আপনারা এগুলো মধ্য যে কোন একটি খেতে পারেন। চলুন তাহলে আলকুশি বীজ কিভাবে খায় জেনে নি।

    1. আপনারা যদি আলকুশি বীজের পাউডার খান তাহলে এর একটি নিয়ম হলো যে হালকা গরম গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে এই আলকুশি বীজের পাউডার খেতে পারেন।
    2. আলকুশির বীজ আপনি একটি গরম পাত্রে ভালোভাবে ভেজে নিবেন, এবং সেগুলো ভাজা হয়ে গেলে সেটি আপনি ছিলে চিবিয়ে খেতে পারেন।
    3. যদি আপনারা আলকুশি বীজের ক্যাপসুল খেতে চান? তাহলে এটি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
    4. চাইলে আপনারা আলকুশির বীজ রান্না করে খেতে পারেন। এই আলকুশির বীজ বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে দিয়ে খাওয়া যায়। চাইলে আপনারা খেতে পারেন।
    5. আপনারা আলকুশির বীজ কফির মধ্য দিয়ে খেতে পারেন । যারা নিয়মিত কফি খান তারা আলকুশি বীজের পাউডার হালকা পরিমাণে অথবা এক চামচ মত কফির মধ্যে দিয়ে খেয়ে নিতে পারেন।
    6.  আরেকটি খাওয়ার নিয়ম হলো যে আপনি এই আলকুশির বীজ গোটা চাবিয়ে খেয়ে নিতে পারেন।
    7. এবং যদি আপনারা চান তাহলে এই আলকুশি বীজের পাউডার রুটি অথবা পরোটার সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।

    আলকুশি বীজ চেনার উপায়

    আলকুশি বীজ চেনার কয়েকটি উপায় রয়েছে। যদি আপনারা এই উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারেন তাহলে অতি সহজেই আলকুশি বীজ চিনতে পারবেন। আলকুশির বীজ দেখতে পুরোটাই সিমের বিজের মত। যদি আপনারা পাহাড়ি, আলকুশির বীজ নিতে চান তাহলে সে আলকুশি বীজগুলো একেবারে সাইজে ছোট হবে। এবং যদি আপনি যেগুলো চাষ করে এগুলো নিতে চান অর্থাৎ বিভিন্ন কীটনাশক সার ব্যবহার করে চাষ করা হয় সেগুলো বড় বড় এবং চকচকে । তাই যদি আপনারা খাঁটি টা নিতে চান তাহলে অবশ্যই পাহাড়ি আলকুসির বীজ নিতে পারেন।

    আলকুশি বীজ চেনার উপায়

    আলকুশি পাতার উপকারিতা

    যাদের শরীরে ফোড়া রয়েছে তারা এই আলকুশির পাতা রস করে ফোড়ার উপর লাগিয়ে দিলে কিছুদিনের মধ্যে সেই ফোড়া পেকে ভালো হয়ে যাবে। এবং যাদের চর্মরোগ রয়েছে তারা সেই চরম রোগের উপর যদি এই আলকুশির পাতা রস বেটে লাগিয়ে দেয়, তাহলে তাদের যেকোনো ধরনের চর্মরোগ সেরে যাবে।

    আলকুশি শিকড়ের উপকারিতা

    আলকুশির একটি উপকারী গাছ, এর প্রত্যেকটা অংশই মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী। যেমন এর শিকড় জড়িয়ে কোন ব্যক্তি বেটে খায় তাহলে তার জ্বর থেকে নিয়ে ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এবং তার সাথে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে । তাই যদি এসব ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে আপনারা আলকুশি শিকড় ব্যবহার করতে পারেন।

    আলকুশি বীজের অপকারিতা।

    • যাদের মাথায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ হ্যালুসিনস এর সমস্যা রয়েছে তারা এই আলকুশির বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
    • যাদের লিভারে প্রচন্ড পরিমাণে সমস্যা রয়েছে তারা এই আলকুশির বীজ থেকে দূরে থাকুন।
    • গর্ভবতী মহিলার জন্য আলকুশি বীজ খাওয়া প্রয়োজন নেই। কারণ আলকুশির বীজ খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মহিলার যেকোনো ধরনের সমস্যা হতে পারে।
    • আলকুশি বীজ প্রচন্ড পরিমাণে খেলে মাথার যেকোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
    • যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তারা এই আলকুশির বীজ থেকে দূরে থাকতে পারেন ।অর্থাৎ যদি হার্টের ওষুধ খান তাহলে অবশ্যই আলকুশির বীজ খাবেন না।

    আলকুশি বীজ কোথায় পাওয়া যায়?

    এই আলকুশির বিজ বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়। যেমন আপনি অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন। এবং চাইলে আপনি বাজারে কিনে নিতে পারেন। এটি প্রায় কম বেশি সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। তাই আপনারা একটু চোখ কান খোলা রাখলেই আলকুশির বীজ পেয়ে যাবেন।

    আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম

    আলকুশি বীজের পাউডার আপনি দুই ভাবে খেতে পারেন। প্রথমত হল আপনি আলখুশের বীজ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। এবং দ্বিতীয়ত হল আলকুশি বীজের পাউডার আপনি গরম পানি অথবা চা দিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। এতে বেশ ভালই উপকারিতা পাবেন ।

    আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম

    উপসংহার

    আজ আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করলাম যে আলকুশির বীজের উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। যদি আপনারা এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আলকুশি বীজ খাওয়ার উপকারিতা এবং আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর ভালো লাগলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন।

    Next Post Previous Post
    No Comment
    Add Comment
    comment url