গ্রীন টি দিয়ে রূপচর্চা । গ্রীন টি খাওয়ার সাস্থ উপকারীতা জেনে নিন


এখন আমরা আলোচনা করব যে গ্রিন টি দিয়ে রূপচর্চা এবং গ্রিন টি খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে। গ্রিন টি একটি কমল জাতীয় পানী। কিন্তু শুধু পানি বললেই এটি ভুল হবে, কারণ এর সঙ্গে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে। যেগুলো আমাদের চেহারার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে এবং শরীরের জন্য বেশ উপকারিতা আনবে।

বর্তমানে গ্রিন টি এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে এ গ্রিন টি রূপচর্চার কাজে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং গ্রিন টি খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা বেশ ভালই রয়েছে। গ্রিনটি খাওয়ার ফলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাচ্ছে। তাই যদি আপনারা গ্রিন টি দিয়ে রূপচর্চা এবং গ্রিন টি খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে এ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

গ্রিন টি কাকে বলে?

আপনারা জানতে চেয়েছেন যে গ্রিন টি কাকে বলে? গ্রিন টি বলতে আমরা সকলেই বুঝি যে যাকে চা বলা হয়, ইংরেজি শব্দ হলো টি।, আর গ্রিন এর এর বাংলা শব্দ হলো যে সবুজ।যেটি একসাথে করলে সবুজ চা বোঝানো হয়। এই সবুজ চায়ের উপকারিতা অনেক রয়েছে। যা আমাদের মানব দেহকে সুস্থ রাখতে এবং ত্বকের যত্নে বেশ ভালো কার্যকারী। এটি একটি কমল জাতীয় পানি ধরতে গেলে ভুল হবে। কারণ এর একটি আশ্চর্য উপকারিতা রয়েছে। কারণ গ্রিন টি তে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের মানব দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এবং বিশেষ করে যাদের মেদ অনেক বড় তাদের ক্ষেত্রে অনেক উপকারী।

গ্রিন টি দিয়ে রূপচর্চা

গ্রিন টি দিয়ে রূপচর্চা শুনতে অবাক লাগলেও এটি আসলে সত্য।কারণ গ্রিন টি তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা ব্যবহারের ফলে ত্বকের যে কোন ধরনের কালো দাগ এবং ক্ষতস্থান সারাতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে বেশ সাহায্য করে। গ্রিন টি দিয়ে রূপচর্চা করার অনেকগুলো নিয়ম রয়েছে। আমরা সেই নিয়মগুলো একে একে বলব। চলুন তাহলে সে নিয়ম সম্পর্কে জেনে নি।

গ্রিন টি রূপচর্চা কাজে আপনারা যেভাবে ব্যবহার করবেন, সেটি হল আপনাকে এক কাপ পরিমাণ পানি নিতে হবে। এবং সে পানিটা হালকা কুসুম কুসুম গরম হতে হবে। তার মধ্যে সেই গ্রিন টি ব্যাগটি দিয়ে দিতে হবে। গ্রিন টি ব্যাগটি দেওয়া হয়ে গেলে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা করে এটি আপনার স্কিনের উপর লাগিয়ে দিতে পারেন। তাহলে এভাবে দশ দিন ব্যবহার করলে আপনাদের মুখের দাগ দূর হবে। এবং মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

আপনি গ্রিন টি রূপচর্চার কাজে আরেকটি নিয়মে ব্যবহার করতে পারেন। সেটি হল গ্রিন টি ব্যাগ নিবেন এবং সেই টি ব্যাগের মধ্যে থাকা ট্রি গুলো একটি পাত্রে নিবেন। এবং তার সঙ্গে কিছু পরিমাণ মধু নিবেন। এটি একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে আপনাদের স্কিনের উপর লাগিয়ে দিলে আপনার স্কিনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

আরো পড়ুন = তুলসি পাতার উপকারীতা জেনে  নিন।

গ্রিন টি দিয়ে রূপচর্চার জন্য আপনারা আরেকটি উপায় ব্যবহার করতে পারেন। সেটি হল যে একটি কাঁচের পাত্রে গ্রীনটি নিবেন। এবং তার সঙ্গে কিছু পরিমাণ হলুদ দিবেন। হলুদ দেওয়া হয়ে গেলে তার মধ্যে কয়েক ফোটা পরিমাণ মধু দিবেন। মধু দেওয়ার পর এটি ভালোভাবে মিক্স করে আপনার স্কিনে লাগিয়ে দিবেন। দিনে দুইবার লাগালেই যথেষ্ট।

গ্রিন টি এর স্বাস্থ্য উপকারিতা

গ্রিন টি মানবের জন্য বেশ ভালো উপকারিতা রয়েছে। আমরা আজ গ্রিন টি এর স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। এবং গ্রিন টি কোন কোন কাজে ব্যবহার করলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায় এবং কিভাবে ব্যবহার করলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায় তা নিয়ে আমরা নিচের দিকে বিস্তারিত বলবো। চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

১)শরীরের দূরগন্ধ

গ্রিন টি ব্যবহার যদি করা যায় তাহলে শরীরের যেসব ঘামের দুর্গন্ধ অথবা দু পায়ের মাঝখান থেকে যেসব গন্ধ সৃষ্টি হয় সেসব গন্ধ দূর করতে পারেন এই গ্রীন টি দিয়ে। এই গ্রিন টি সেসব দুর্গন্ধ দূর করার জন্য ব্যবহারের নিয়ম হলো যে একটি কাপে পানি নিবেন, সে পানিটি হালকা কুসুম গরম হতে হবে, এবং তার মধ্যে গ্রিন টি দিয়ে দিবেন। দেওয়ার পর সেই পানিগুলো ভালোভাবে মিক্সড করে আপনার যেখান থেকে বেশি গন্ধ সৃষ্টি হয় সেখানে লাগিয়ে দিবেন তাহলে গন্ধ চলে যাবে।

২)শরীর সুস্থ

গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণ এন্টি এক্সিডেন্ট রয়েছে। যা আমাদের শরীরকে সতেজ এবং শক্তিশালী রাখতে বেশ সাহায্য করে। তাই যদি আপনারা শরীর সুস্থ রাখতে চান তাহলে গ্রিন টি খেতে পারেন।

৩)এলার্জি

গ্রিন টি এলার্জি রোগের জন্য বেশ উপকারী। যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা এই গ্রিন টি খেতে পারেন। বিভিন্ন গবেষকরা বলে থাকে যে গ্রিন টি এলার্জি নিরাময়ের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪)রোগ প্রোতিরোধ ক্ষমতা

গ্রিন টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে দুর্বল তারা এই গ্রিন টি নিয়মিত খেতে পারেন। যদি আপনারা এই গ্রিন টি নিয়ম করে মাত্র কয়েকদিন খান, তাহলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

৫)হার্ট

গ্রিন টি হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে পারে। যাদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা প্রচুর পরিমাণে রয়েছে এবং যাদের হার্ট অনেক দুর্বল তারা এই গ্রীনটি নিয়মিত খেতে পারে। তাহলে তাদের হাড়ের সমস্যা দূর হবে।

৬)ব্রন

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে যে ব্রণের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই গ্রিন টি। যাদের ব্রনের সমস্যা রয়েছে তারা এই গ্রিন টি ব্যবহার করতে পারেন। এ গ্রিন টি ব্রণের ক্ষেত্রে ব্যবহারের নিয়ম হলো যে হালকা কুসুম গরম পানিতে গ্রিন টি ভালোভাবে মিশিয়ে নিবেন। এবং তার সঙ্গে কিছু পরিমাণ মধু দিয়ে দিবেন। এবং মধু দেওয়া হয়ে গেলে এটি আপনি স্কিনের উপর লাগিয়ে দিবেন। তাহলে আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাবে।

৭)চুল

চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে এই গ্রীন টি। যাদের প্রচন্ড পরিমাণে চুল পড়ে এবং চুল উঠে যায় তাহলে এই গ্রিন টি ব্যবহার করতে পারেন। তাদের ক্ষেত্রে এই গ্রিন টি ব্যবহার করার নিয়ম হলো আপনারা একটি পাত্রে পানি নিয়ে নিবেন। এবং সেই পাত্রের গ্রিন টি দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে মাথাতে পাঁচ মিনিট মতো দিয়ে রাখবেন। এরপর মাথা ধুয়ে ফেলবেন। তাহলে কয়েকদিনের মধ্যেই চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

৮)ওজন

গ্রিন টি ওজন কমাতে বেশ সাহায্য করে। এটি ১০০% কার্যকারী, যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তারা এই গ্রিন টি খেতে পারেন। যদি আপনারা এই গ্রিন টি নিয়মিত খান তাহলে অবশ্যই আপনাদের ওজন এক মাসের মধ্যেই 10 থেকে 12 কেজি মতো কমে যাবে। তাই আপনারা এই গ্রিন টি ব্যবহার করতে পারেন।

৯)চোখের নিচের কালো দাগ

গ্রিন টি চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। যাদের চোখে নিচের কালো দাগ পড়ে গেছে, তারা যদি এই গ্রিন টি চোখে ব্যবহার করতে পারে অর্থাৎ দাগের ওপর ব্যবহার করতে পারে তাহলে তাদের চোখের নিচের যেকোনো ধরনের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।

১০)ডায়বেটিস

গ্রিন টি ডায়াবেটিসের জন্য বেশ উপকারী। যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারাই গ্রিন টি খেতে পারেন। কিন্তু একটি কথা মনে রাখবেন এই গ্রিন টি খাওয়ার সময় কোনভাবেই চিনি অথবা মিষ্টি জাতীয় কিছু ব্যবহার করবেন না। তাহলে বেশ ভালো উপকার পাবেন।

গ্রিন টি কোন কাজে ব্যবহার করা হয়?

গ্রিন টি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। তার মধ্যে আমরা কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আমরা বেশ কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করব। যা আপনারা বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নিই কোন কোন কাজের জন্য এই গ্রিন টি ব্যবহার করা যায়।

যদি আপনার বাসায় একটি ফ্রিজ থাকে তাহলে সেই ফ্রিজে যদি প্রচন্ড পরিমানে গন্ধ হয়ে যায় অর্থাৎ মাংস পচে যাওয়া অথবা মাছ পচে যাওয়া গ্যাস করে তাহলে আপনারা এই গ্রিন টি ব্যবহার করতে পারেন। ফ্রিজের জন্য গ্রিন টি ব্যবহার করার নিয়ম হলো যে আপনারা একটি গ্রিন টি ব্যাগ নিবেন এবং সেটি একটি কাপে করে গুলে নিবেন।নেয়া হয়ে গেলে এটি আপনার ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিবেন। তাহলে ফ্রিজের গন্ধ চলে যাবে।

যারা বিভিন্ন সময় স্মোকিং অথবা মদ্যপান করে থাকেন তাদের মুখ থেকে বিভিন্ন সময় অনেক গন্ধ বের হয় । তারা যদি এই মুখে গন্ধ দূর করতে চায় তাহলে এই গ্রিন টি ব্যবহার করতে পারে। এই গ্রিন টি ব্যবহার করার নিয়ম হলো যে তারা হালকা পরিমাণে গ্রিন টি নিবেন। এবং সেগুলো চিবাতে থাকবে তাহলে মুখের মধ্যে একটি সেন্ট তৈরি হবে। নেশা জাতীয় দ্রব্য গন্ধ বের করে দিবে ।

গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম

গ্রিন টি খাওয়ার কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। যদি আপনারা এই নিয়মে খান তাহলে আপনাদের কোন ধরনের সমস্যা হবে না। প্রথমে যে নিয়মটি হল সেটি হল গ্রিন টি কখনোই গরম অবস্থায় খাবেন না। কারণ গ্রিন টি গরম অবস্থায় খালি এতে লিভার থেকে শুরু করে জিব্বা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই গ্রিন টি ঠান্ডা করে খাবেন।

বিভিন্ন খাবার খাওয়ার সঙ্গে কখনো গ্রিন টি খাবেন না। এটি একেবারে আলাদা সময় খাবেন অর্থাৎ যে সময় কোন ধরনের অন্যান্য খাবার খাবেন না। সে সময়ে গ্রিন টি খান তাহলে এর উপকারিতা ভালো পাবেন। কারণ যদি আপনারা কোন খাবার খাওয়ার আগেই গ্রিন টি খান তাহলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যখন আপনারা গ্রিন টি খাবেন তখন তার সঙ্গে কোনোভাবেই কোন ধরনের ওষুধ খাবেন না। কারণ গ্রিন টি তে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে ।যা আপনার ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে । তাই ওষুধ খাওয়ার সময় কোনভাবে গ্রিন টি খাবেন না।

গ্রিন টি এর সঙ্গে কোনভাবেই চিনি অথবা দুধ মিশিয়ে খাবেন না। শুধুই গ্রিন টি খাবেন ।এর বাদে অন্য কিছু তার সঙ্গে খাবেন না। অন্যান্য জিনিস মিশিয়ে খাবেন না।

গ্রিন টি খাওয়ার ক্ষতিকর দিক

গ্রিন টি খাওয়ার তেমন কোন ক্ষতিকর দিক নেই। কিন্তু কয়েকটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে। সেটি হল যাদের অ্যাসিডিটি সমস্যা আছে অথবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হতে পারে। যদি তারা একটু বেশি পরিমাণে এই গ্রিন টি খেয়ে ফেলে তারে গ্রিন টি তে থাকা ট্যানিন উপাদান যা আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে সাহায্য করে। এবং যদি আপনি এই গ্রিন টি অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনাদের বমি বমি ভাব এসব ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

উপসংহার

আজ আমরা এই আর্টিকেল আলোচনা করলাম যে গ্রীন টি দিয়ে রূপচর্চা এবং গ্রিন টি খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে। যদি আপনারা এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে গ্রিন টি দিয়ে রূপচর্চা এবং গ্রিন টি খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আরেকটি কথা হলো যে গ্রিন টি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তাই আপনারা এই গ্রিন টি নিয়মিত খেতে পারেন। কিন্তু একটি কথা মনে রাখবেন যে নিয়মের বাইরে কোন সময় খাবেন না। যদি নিয়মের বাইরে খান তাহলে এটা আপনার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। যদি ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করুন এবং অন্যকে জানার সুযোগ করে দিন। আর এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url