টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না ?
টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না? সে সম্পর্কে আমরা এখন বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরব। কারণ এটি আমাদের প্রত্যেকটি মানুষেরই জেনে থাকা উচিত। কারণ এটি কমবেশি সকলেরই জীবনে একবার না একবার হয়ে থাকে। চলুন তাহলে টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবেনা সেটি জেনে নি।
টনসিল হলো জিভ ভা এর নিচে অর্থাৎ গলার দুই পাশে গোল গোল যেগুলো দেখতে পাওয়া যায়। সেটাকে বলা হয় টনসিল। এটি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় টনসিলাইটিস। এই টনসিল মূলত বিভিন্ন ধরনের মানুষেরই হতে পারে। বিশেষ করে ছোটদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায় । যেমন চার থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্য। এটি মূলত শীতকালে সব থেকে বেশি দেখা যায়। চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
টনসিল কাকে বলে ?
টনসিল কাকে বলে? এটি আমাদের সকলকে জেনে থাকা উচিত। এবং কমবেশি প্রায় সকলেই টনসিল সম্পর্কে আমরা জানি। যেমন টনসিল গলার মধ্যে অর্থাৎ মুখের ভিতর থেকে জিব্বার নিচে যে দুইটি গোল গোল আকৃতির অঙ্গ দেখা যায় সেটাকে বলা হয় টনসিল।এবং বিজ্ঞানের ভাষায় টনসিলাইটিস বলা হয়ে থাকে। এটি মূলত প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডার কারণে হতে পারে ।
আরো পড়ুন = কানপাকা রোগের ঔষধের নাম জেনে নিন।
এমনকি টনসিলের কাছে খাবার জমার কারণে সেখানে ইনফেকশন এর মত সমস্যা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে টনসিল এটি মূলত চার থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বয়সের সবথেকে বেশি দেখা যায়। এমনকি এটি যেকোনো ধরনের বয়সে হতে পারে।টনসিলের ব্যথা যে কোন সময় বিভিন্ন আকার ধারণ করতে পারে। যেমন তীব্র অথবা দীর্ঘস্থায়ী অথবা পুনরাবৃত্ত। টনসিল হলে আমাদের যেসব করণীয় তা নিচের দিকে তুলে ধরব। জানতে হলে অবশ্যই আমাদের সঙ্গে থাকুন।
টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবেনা
- শুকনো খাবার: টনসিল হলে অর্থাৎ যদি আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার টনসিল হয়েছে তাহলে অবশ্যই শুকনো খাবার পরিহার করুন। কারন এটি টনসিলের জায়গাতেই আঘাত লেগে সেখানে ইনফেকশন এর মত সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- শক্ত মাংস: আমরা যখন মাংস খাব তখন অবশ্যই মাংসটিকে ভালোভাবে সিদ্ধ করে নেব। নয়তো এটি যদি কোন টনসিল আলা রোগী খায় তাহলে তার টনসিলার সমস্যা হবে। অর্থাৎ ব্যথা হবে এমনকি ইনফেকশন হতে পারে।
- শক্তফল: আমাদের যদি টনসিল হয় তাহলে শক্ত ফলগুলো পরিহার করব কারণ। এটি টনসিল কে মারাত্মকভাবে ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। যেমন আপেল, খেজুর, আম, পেয়ারা ,ইত্যাদি।
- চানাচুর :যদি আপনি একজন টনসিলের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এ চানাচুর পরিহার করতে হবে। কারণ এটি একটি ঝাল জাতীয় খাবার। এটি টনসিলের মধ্যে লেগে টনসিলের জ্বালাপোড়া ইত্যাদি ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। এমনকি ইনফেকশন এর মত সমস্যা হতে পারে।
- টক জাতীয় খাবার: যদি আপনার টনসিল হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই টক জাতীয় খাবার কে পরিহার করতে হবে। আমরা সকলেই জানি যে টক জাতীয় খাবার এটি যে কোন ধরনের ক্ষতস্থানকে সারাতে বেশ দেরি করে দেয়। যেমন তেতুল, এটি ক্ষত স্থানের জন্য তেমন কোনো উপকারী না। তাই যদি আপনার টনসিলার মত সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তেঁতুল এবং টক জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
- গরম খাবার: গরম খাবার গুলো আমাদেরকে পরিহার করতে হবে। এটি টনসিলের জন্য সমস্যা হতে পারে।
- অনেক মসলা যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
- ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করতে হবে।
- ধূমপান: পরিহার করতে হবে। আমরা সকলে জানি যে ধূমপান এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাও আমরা খেয়ে থাকি। যদি আপনার টনসিল হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ধূমপান পরিহার করতে হবে।
- অ্যালকোহল: জাতীয় খাবার গুলো পরিহার করতে হবে কারণ এটির টনসিলের জন্য জন্য মারাত্মক ঝুঁকি হয়ে তুলে ।এমনকি ইনফেকশন এর মত সমস্যা হতে পারে।
- শুকনো গুড়া মরিচ: এটি আমাদেরকে সব থেকে বেশি পরিহার করতে হবে। শুকনো গুড়ো মরিচ এটি আমাদের শরীরের এবং পেটের জন্য অনেক ক্ষতিকারক । এবং যদি আপনি টনসিলের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই শুকনো গুড়ো মরিচ পরিহার করবেন।
টনসিল হলে কি কি খাওয়া উচিত
টনসিল এটি একটি মারাত্মক রোগ। এবং এটি নিয়ে টেনশনে কোন কারণ নেই। কারণ এই রোগটি খুব সহজেই ভালো হয়ে যায়। যদি আমরা কয়েকটি নিয়ম মেনে চলি এবং কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে। এবং কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে না? সে সম্পর্কে যদি ভালোভাবে মানতে পারে তাহলে খুব সহজেই ভালো হয়ে যায়। চলুন তাহলে টনসিল হলে কি কি খাওয়া উচিত জেনে নি।
- টনসিল হলে আপনারা মারি ভাত খেতে পারেন। যেমন একেবারেই নরম ভাত এবং খিচুড়ি, পোলাও ইত্যাদি খেতে পারেন। সুপ এগুলো অনায়াসে খেতে পারেন। এটি খেলে টনসিলা তেমন কোন সমস্যা হবে না।
- ঠান্ডা জাতীয় খাবার খেতে পারেন। কিন্তু একটি কথা মনে রাখতে হবে যদি আপনার প্রচন্ড পরিমাণে ঠান্ডা লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই ঠান্ডা জাতীয় খাবার কে পরিহার করতে হবে। কারণ ঠান্ডা টনসিলের জন্য অনেক ক্ষতিকারক হয়ে থাকে।
- চাইলে আপনারা বাদাম, দুধ ইত্যাদি খেতে পারেন। কিন্তু বাদাম খাওয়ার আগে অবশ্যই বাদামকে ভালোভাবে বিলিন্ডারে পেস্ট করে নিতে হবে। এরপর দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে।
- পানি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। যদি টনসিল হয় তাহলে অবশ্যই পানি প্রচুর পরিমাণে খাবেন। কারণ এ পানি খাওয়ার মধ্য দিয়ে আপনার পেট সবসময় ভরপুর থাকবে। এবং সেটির শরীরকে সুস্থ রাখবে এবং তার সঙ্গে টনসিলের সমস্যা অথবা ব্যথা কমিয়ে দিবে। এবং টনসিরা যদি কোন ময়লা- আবর্জনা লেগে থাকে তাহলে সেগুলো দূর করবে।
টনসিলের ফলা কমানোর উপায়।
টনসিলের ফোলা কমানোর জন্য আমাদেরকে কয়েকটি ধাপ মেনে চলতে হবে। তাহলে দ্রুত টনসেলে ফোলা এবং ব্যথা কমিয়ে আনা সম্ভব। যদি আপনার টনসিল ফুলে যায় তাহলে আপনাদের প্রথমে যে কাজটি করতে হবে সেটি হল গরম পানি দিয়ে তার সঙ্গে লবণ মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে সেগুলো দিয়ে ভালোভাবে কুলি করবেন ।এবং বাইরে হালকা করে ঢালবেন ।এবং টনসিলের ফলা কমানোর জন্য আপনারা আরেকটি উপায় মানতে পারেন সেটি হল গরম সেঁক দেওয়া। যদি আপনারা গরম কাপড় দিয়ে হালকা হালকা করে শাক দেন তাহলে দ্রুত ফোলা কমে আসবে।
টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ
আমাদের কমবেশি প্রায় সকলেরই টনসিল গুলো দেখা যায়। কিন্তু এটা টনসিল গুলো দীর্ঘদিন ব্যাথা বা থাকার কারণে বিভিন্ন সময় ইনফেকশনের মত সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই আমাদের টনসিল ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো জেনে থাকা উচিত। চলুন তাহলে জেনে নি।’
টনসিল ইনফেকশন হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন গলা ব্যথা এবং ঘাড় ব্যাথা এবং ঘাড় ফুলে যাওয়া এবং সাদা সাদা পুজ বের হওয়া এবং জ্বর, কান ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, এবং ছোটদের ক্ষেত্রে মুখ দিয়ে লালা পরা, ইত্যাদি ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তখনই বুঝে নিবেন টনসিল ইনফেকশন এ সমস্যা হতে পারে।
টনসিল কেন হয়
টনসিলের বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন ঠান্ডা লাগার কারণে টনসিলের মত সমস্যা হতে পারে ।এটি সবথেকে কম দেখা যায় কিন্তু একটি ভাইরাস রয়েছে ।যেটার নাম হল স্টেপ। এ ভাইরাসটি যদি আমাদের গলায় সংক্রমণ করে তাহলে এটি টনসিলের মত সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে ৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী মধ্য যেসব শিশু রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এটি সবথেকে বেশি দেখা যায় ।এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দেখা যায়।কিন্তু কম। আশা করি টনসিল কেন হয়? সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
টনসিল ভালো হতে কতদিন সময় লাগে।
টনসিল ভালো হতে মূলত বেশ কিছুদিন সময় লাগতে পারে। যেমন ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে টনসিল ভালো হয়ে যেতে পারে। কিন্তু একটি কথা আমাদের মনে রাখা উচিত সেটি হল যদি টনসিলের ব্যথা দীর্ঘদিন ধরে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।নয়তো এটি পরবর্তী ইনফেকশন এর মত সমস্যা তৈরি হতে পারে। এবং এই ইনফেকশনের সমস্যা থেকে ক্যান্সারের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই টনসিল হলে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে যদি ভালো না হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
টনসিল হলে কি কি করা উচিত
টনসিল হলে আমাদের কয়েকটি করণীয় রয়েছে। যেমন যদি টনসিলটি দীর্ঘদিনের হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যেমন তিন থেকে পাঁচদিনের বাইরে যদি ব্যথা থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। চাইলে আপনারা ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করা টনসিল ভালো করতে পারেন।
যেমন আপনাকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এবং তার সঙ্গে লবণ পানিতে কুলি করতে হবে। কারণ লবণ পানি এটি জীবাণু ধ্বংস করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।এবং ধূমপান ঠান্ডা জাতীয় খাবার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে। আর যদি এগুলোতে কাজে না দেয়, হয় তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডাক্তারের সঙ্গে কখন দেখা করা উচিত।
- ডাক্তারের সঙ্গে কখন দেখা করা উচিত এটি আমাদের সকলের জেনে থাকা উচিত।
- যদি আপনার গলা ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- এবং জ্বর শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি ধরনের সমস্যা দেখা দিলে আপনারা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
- এবং যদি আপনার টনসিল তিন থেকে পাঁচদিনের উপর ব্যথা থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
- এবং যদি টনসিলায় বারবার এই সমস্যাটি দেখা দেয় তাহলে একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
টনসিলের ওষুধের নাম
- E Fix 100mg
- Reservix 100mg
- পেনিসিলিন
- প্যারাসিটামল
উপসংহার
আজ আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না? এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছি। এবং ওষুধ সম্পর্কে আরো সকল তথ্য তুলে ধরেছি। এবং তার সঙ্গে টনসিল কাকে বলে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছি। যদি আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন তাহলে সম্পূর্ণভাবে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এবং পেরেছেন ।যদি আর্টিকেলটি ভালো লাগে তাহলে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করুন। কারন অন্যদেরকে শেয়ার করার ফলে তারা উপকৃত হতে পারবে ।এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।